সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

অর্থ সংকটে ডিএনডি প্রকল্প

নিউজ ডেস্কঃ ২০১৬ সালে একনেকে পাশ হওয়া ডিএনডির মেগা প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হলেও তা সম্পন্ন হয়নি আজও। খাল উদ্ধারে জটিলতার পাশাপাশি বরাদ্ধকৃত অর্থ না মেলার কথা জানা গেছে প্রকল্প কর্তাদের কাছ থেকে।

তাই দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ হলেও যথা সময়ে বাস্তবায়ন হবে কিনা- তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ডিএনডি অধ্যুষিত খাল উদ্ধারে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। এই জটিলতার মধ্যে ৮৯ কিলোমিটার খাল উদ্ধার করা গেলেও এখনো অবশিষ্ট রয়েছে ৪.৯৮ কিলোমিটার খাল। এর চেয়েও বড় জটিলতা দেখা দিয়েছে প্রকল্পের আর্থিক জরাজীর্ণতায়।

ডিএনডি প্রকল্পের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজন মত মিলছে না প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত অর্থ। এ বছর বরাদ্ধকৃত অর্থের জোগান এখনো পায়নি প্রজেক্ট কর্মকর্তারা। সময়মত চাহিদাতুল্য অর্থ না মেলায় কাজের কাঙ্খিত অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও ওই সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করা যাবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনডি প্রজেক্টর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় ৫ বছর অতিক্রম হওয়া ১২শ’ ৯৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৫০ শতাংশ বরাদ্ধ হাতে এসেছে। এবছর প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত অর্থ এখনো তারা হাতে পাননি।

ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, চলতি বছর বরাদ্ধের টাকা দেয়া হয়নি। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ডিএনডি প্রজেক্ট থেকে। কাজ চালিয়ে যাওয়া বড় ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

সেনাবাহিনীর অধিনে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিষয়টা যেহেতু আর্থিক, সেহেতু তাদেরও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

এক্ষেত্রে যদি প্রকল্পের বরাদ্ধ হাতে না আসে তাহলে থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রজেক্টের অসমাপ্ত কাজ। এতে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করণের লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন হবে না।

এদিকে, অর্থ বরাদ্ধ ছাড়াও নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আরো একটি জটিলতা রয়েছে। তা হলো খালে অবস্থিত অবৈধ স্থাপনা। সূত্র বলছে, ডিএনডি খালের বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি ব্যক্তি মালিকানা ভবন এখনো বিদ্যমান। এই ব্যক্তিমালিকানা ভবনের মালিকরা উচ্ছেদ ঠেকাতে আদালতে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেছে।

ইতিপূর্বে এমন রিট মামলা ৯০টি থাকলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ৩৫টি। অর্থাৎ ব্যক্তিমালিকানা ৩৫টি ভবন এখনো ডিএনডি খালে বিদ্যমান। মামলার প্রেক্ষিতে ওই সকল ভবন বা জমিতে স্থগীতাদেশ দিয়ে রেখেছেন বিজ্ঞ আদালত। ফলে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তা অপসারণ করা যাচ্ছে না।

পাশাপাশি মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ীসহ ১৮টি স্থাপনা এখনো খালে বিদ্যমান। যদিও এর সমাধানকল্পে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএনডি প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে খাল উদ্ধারে সময় বিলম্ব এবং চাহিদাতুল্য অর্থ না পেলে ২০২৩ সালের জুনের দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেকে পাশ হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পূনরুদ্ধারের মেগা প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্পের মেয়াদ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে প্রকল্প ব্যায়ও। ৫১৮ কোটি ১৯ লক্ষ টাকার প্রকল্প ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২শ’ ৯৯ কোটি টাকায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published.

Design & Developed BY N Host BD